পালানোর আগে আসাদের শেষ কয়েক ঘণ্টা কেমন কেটেছিল?

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার দেশের ক্রমবর্ধমান সংকটময় পরিস্থিতি থেকে পালানোর জন্য যে পরিকল্পনা করেছিলেন, তা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী, সরকারি কর্মকর্তা এবং এমনকি পরিবারের সদস্যদের কাছেও ছিল সম্পূর্ণ অজানা। তিনি মস্কোতে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গোপন রাখতে প্রতারণা এবং ছলনার আশ্রয় নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসাদের এমন গোপন কৌশল সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের এক নাটকীয় সমাপ্তি ঘটায়।

গত ৭ ডিসেম্বর মস্কোতে পালিয়ে যাওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে, দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠকে প্রায় ৩০ জন সামরিক এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তার সামনে আসাদ জানান, রুশ সামরিক সহায়তা আসছে এবং পদাতিক বাহিনীকে প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। তবে, ওই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পরেই নিজেই বিমানবন্দরে চলে যান।

রয়টার্স জানায়, পলায়নের আগে আসাদ তার কার্যালয়ের ম্যানেজারকে কাজ শেষে বাসায় ফেরার নির্দেশ দেন। এমনকি, তার মিডিয়া উপদেষ্টা বুতাইনা শাবানকে বক্তৃতা লেখার জন্য বাসভবনে ডেকে পাঠান। কিন্তু শাবান সেখানে পৌঁছে তাকে না পেয়ে হতবাক হন।

আরব রিফর্ম ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক নদিম হুরি বলেন, আসাদ তার সেনাদের শেষ পর্যন্ত একত্রিতও করেননি। তাদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেন। তার এই আচরণে স্পষ্ট হয়, নিজের নিরাপত্তার বিষয়টিকেই তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, আসাদ প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় চাইলে আবুধাবি তা প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তীতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন। আসাদকে মস্কোতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। বিদ্রোহীদের সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে মস্কোতে তাকে স্থানান্তর করা হয়।

৮ ডিসেম্বর ভোরে আসাদ সিরিয়া ত্যাগ করেন। এর মধ্য দিয়ে তার দুই দশকের শাসনের অবসান ঘটে। একই সঙ্গে আসাদের পরিবারের পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে চলা রাজতন্ত্রেরও পতন হয়।

দামেস্ক বিদ্রোহীদের হাতে দখলের শঙ্কায় তিনি মস্কোতে পালান। তার ধারণা ছিল, ইরানের সামরিক সহায়তা চাইলে ইসরাইল সিরিয়াকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে। একই সঙ্গে, মস্কো সামরিক সহায়তা প্রত্যাখ্যান করায় আসাদ আর কোনো বিকল্প দেখেননি।

বাশার আল-আসাদের পলায়নের মাধ্যমে ১৩ বছরের সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের এক অপ্রত্যাশিত সমাপ্তি ঘটে। আসাদ তার জাতির জন্য রেখে যান এক বিধ্বস্ত ভবিষ্যৎ, যেখানে মানবিক সংকট, ধ্বংসস্তূপ, এবং অনিশ্চিত রাজনৈতিক অবস্থা চিরস্থায়ী রূপ ধারণ করেছে।